মানুষের বিশাল খাদ্য তালিকায় পাথরের নাম নেই। অথচ এই পাথর খেয়েই দিব্যি বেঁচে আছেন একজন আবদুল করিম। বয়স এখন ৬০। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে পাথর খাচ্ছেন। কখনো পেটের পীড়া কিংবা অন্য কোনো সমস্যায় আক্রান্ত হননি। আখাউড়া রেলস্টেশন এলাকায় ফুটপাতের পাশে বসে অবলীলায় পাথর খেয়ে যান আবদুল করিম। শুধু পাথর নয়, পাথরের পাশাপাশি কাচের টুকরোও আছে তার খাদ্য তালিকায়।
আবদুল করিম অবশ্য স্বাভাবিক খাদ্যও খান। ভাত, চা, বিস্কুটসহ সবধরনের খাবার। পাথর খাচ্ছেন কেন জিজ্ঞেস করতেই সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দুই-পাঁচ টাকার নোট ও কয়েন দেখিয়ে বললেন, ‘টাকার জন্য। এটাই আমার পেশা। এই থেকে নিজের খাবার ও বাড়িতে বুড়ো মায়ের খাওয়াদাওয়ার জন্য টাকা পাঠাতে হয়।’
পাথর খাওয়া বলতে যে বড় বড় পাথর দাঁতে ভেঙে খান, তা নয়। পাথর না বলে পাথরকুচি বলাই ভালো। খান বেশ শব্দ করে চিবিয়ে চিবিয়ে। বড় ধরনের টুকরো হলে চিবানোর ঝামেলায় না গিয়ে গিলে পেটের ভেতর চালান করে দেন।
আখাউড়া রেলস্টেশনে রাতদিন হাজার লোকের আনাগোনা। যাত্রী উঠছেন, নামছেন। কৌতূহলীরা আবদুল করিমের পাথর খাওয়া দেখে অবাক মানছেন। কেউ কেউ টাকা-পয়সাও দিচ্ছেন। এটাই আবদুল করিমের আয়ের উত্স। বেশি কৌতূহলীদের কেউ কেউ করিমের পেটেও হাত দিয়ে দেখেন। চাপ দিলে পাথরের ঘরঘর আওয়াজ পান।
আবদুল করিম আখাউড়ার স্থায়ী বাসিন্দা নন। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের জসিহাটি। একটু ভাবুক টাইপের আবদুল করিম জানালেন, জীবিকার তাগিদেই তিনি পাথর খাওয়া শিখেছেন। ১৫ বছর বয়সে বাবা ফারুক হোসেন মারা যাওয়ার পর চার ভাইবোনের সবার বড় করিম বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ঘুরতে ঘুরতে আজমিরে খাজা বাবার মাজারে গেলে সেখানে চিশতী নামক এক ওস্তাদের কাছে পাথর খাওয়ার তালিম নেন। সে থেকে শুরু। ৪৫ বছর ধরে পাথর খেয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার কোনোই ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করলেন করিম।
থাকার জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থান নেই আবদুল করিমের। রাতে স্টেশনের ফুটপাতে পড়ে থাকেন। মাঝেমধ্যে অবশ্য লাপাত্তা হয়ে যান। সে সময় কোনো পীর-মুর্শিদের দরগাই নাকি তার ঠিকানা হয়।
এদিকে পাথর খান বলে স্থানীয় লোকজনের কাছে আবদুল করিম ‘পাথর শাহ’ নামে পরিচিত।
No comments:
Post a Comment